বন্ধুত্ব যেখানে হার মানায় ধর্মকেও। বন্ধুত্বে না থাকে জাতপাত না থাকে ধনী দরিদ্রের বিভেদ, এ কথা সর্বজন বিদিত হলেও বাস্তবে তা প্রমান করে দেখালেন হাসুল মহম্মদ। বছর ছয়েক আগে কালিয়াগঞ্জের এক ঋণদায়ক সংস্থার সূত্রে রায়গঞ্জ ঢেলপি গ্রামের বাসিন্দা হাসুল মহম্মদের সাথে আলাপ হয় ওই সংস্থার এজেন্ট কালিয়াগঞ্জের কুনোরের বাসিন্দা অচিন্ত্য বিশ্বাসের সাথে। তবে বছর খানেক আগে অচিন্ত্য বিশ্বাসের দুটো কিডনিই আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকায় বেঁচে থাকার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজন হয়ে পরে কিডনি প্রতিস্থাপনের।

কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন একদিকে যেমন খরচ সাপেক্ষ বিষয় তেমনি সঠিক কিডনি দাতা খুঁজে পাওয়াও বেশ কঠিন। মাথায় হাত পরে তার স্ত্রী রিতার, আট বছরের সন্তানকে নিয়ে কার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবেন সেই চিন্তায়।আর জাত ধর্ম ভুলে বন্ধুর এমন বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ালেন আরেক বন্ধু। তবে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও দুই বন্ধুর রক্তের গ্রূপ মিলে যাওয়ায় অচিন্ত্য বিশ্বাসের জন্যে কিডনি দাতার সমস্যা সমাধান করে দিলেন তার বন্ধু হাসুল মহম্মদই। তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে তিনি সরাসরি লিখিত আবেদন করায় কিডনি দাতা কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এহেন সিন্ধান্ত নিচ্ছেন বা অর্থের বিনিময়ে এমন সিন্ধান্ত নিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখে রায়গঞ্জ জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসুল বিনা স্বার্থেই বন্ধুকে কিডনি দিতে চান।
বছর ৩০র হাসুল, হাটে হাটে কাপড়ের ছোট দোকান দিয়েই সংসার চালান পাঁচজনের।কিন্তু পরিবারের সকলের সম্মতি নিয়েই বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ানোর উদ্যোগে প্রসঙ্গে হাসুল বলেন,’বন্ধুর জন্যে তো অনেকে প্রাণও দিয়ে দেয়। কিন্তু আমার একটা কিডনি দিলে তো আমি মরব না বরং আমার বন্ধুর জীবনটা বাচঁবে। তাই সেই তাগিদেই নিজের একটি কিডনি বন্ধু অচিন্ত্যকে দিতে রাজি হয়েছি। এই ব্যাপারে আমার পরিবারের সকলেও সহমত।’আর ছেলের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে পেশায় চায়ের দোকানি ফয়ম মহম্মদের বক্তব্য, ‘ আমার ছেলে মানুষকে বাঁচাতে মনুষ্যত্বের ধর্ম পালন করছে।’