পরশ পাথরের ছোঁয়ায়, লোহা সোনা হলেও সেই পরশপাথর ভাগ্য ফেরেনি তুলসী চক্রবর্তী । হাওড়া শিবপুর কৈলাস বোস লেন যেখানে আসলে দেখা যাবে স্মৃতি বিজড়িত ভাঙাচোরা বাড়ি ভগ্নদশায় রয়েছে সাপের বাস। সারা জীবনের দুঃখ দৈন্যদশা কেটে গিয়েছিল জীবন রেখেছিলেন তার স্ত্রীকে কপর্দকশূন্য অবস্থায়। চেয়েচিন্তে খেয়ে জীবনের শেষ সময়টা কাটিয়ে চলে গেলেন তিনি। কিন্তু পরশপাথরের সেই ফর্মুলা। আজও জুটলো না তার ভাগ্যে। তাই দ্বীপ জ্বেলে গেলেও রয়ে গেল প্রদীপের তলায় অন্ধকার।

তুলসী চক্রবর্তী (৩ মার্চ, ১৮৯৯ – ১১ ডিসেম্বর, ১৯৬১) ১৯৪০ এবং ১৯৫০ সালের বাংলা সিনেমার এক স্বনামধন্য অভিনেতা সময় ছিলেন। প্রধানত কমিক ভূমিকায় উনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত “পরশপাথর” চলচ্চিত্রের মুখ্য অভিনেতা হিসাবে।

বাল্যকাল
তুলসী চক্রবর্তী গোয়ারি নামক এক ছোট গ্রামে ১৮৯৯ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আশুতোষ চক্রবর্তী ভারতীয় রেল-এর কর্মী ছিলেন। বাল্যকালে তাই অবিভক্ত বাংলায় নানা স্থানে ঘুরতে হয়েছে। সুতরাং তরুণ তুলসী চক্রবর্তীকে কলকাতায় তাঁর কাকা প্রসাদ চক্রবর্তীর কাছে কিছুকাল থাকতে হয়েছিল। প্রসাদবাবু প্রখ্যাত স্টার থিয়েটার-এর এক জন বিশিষ্ট তবলা ও হারমোনিয়াম বাদক ছিলেন। এবং তাঁর যোগাযোগে তুলসী চক্রবর্তী নিজের প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের দেখার সুযোগ লাভ করেন। সেখান থেকেই তিনি অভিনয় ও সঙ্গীতে যোগদান করার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। পরবর্তী কালে বাস্তবসম্মত অভিনেতা হিসাবে তিনি পরিচিতি পান। কোনও মেক-আপ বা অতিরিক্ত আয়োজন না ব্যবহার করে, সাধারণত কাঁধে একটি উপবীত ও একটি সাদা ধুতি পরিধান করতেন।

কর্মজীবন
উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনিত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ চলচ্চিত্রে তুলসী চক্রবর্তী একটি লজিং-এর ম্যানেজার হিসাবে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পরশপাথর’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন। এবং পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রে এক পাঠশালার গুরুমশাই হিসাবে ছোট্ট ভূমিকায় দেখা যায় তুলসী চক্রবর্তী-কে। সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, তুলসী চক্রবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে তাঁকে অভিনয় দক্ষতার জন্য অস্কার পুরস্কার প্রদান করা হত।তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান যদি তার মূর্তি স্থাপন করা যেত তবে কিছুটা হলেও ভালো হয়।তুলসী চক্রবর্তীর মৃত্যু হয় ১৯৬১ সালের ১১ ডিসেম্বর।