
শীত বিদায়ে বসন্তের শুরু, কিন্তু এককালের গল্পে পড়া বসন্তের সেই হালকা গরম হালকা ঠান্ডার আবহাওয়া উপভোগ করার সুযোগ আপনার হয়েছে কি কখনো ? বয়স্কদের প্রশ্নটা করলে অনেক ভেবে তাদের ছোটবেলার বসন্ত কালের কথা হয়ত বলতে পারবেন, কিন্তু নব প্রজন্মের কাছে যে বসন্ত বলতে শুধু দোল উৎসব। কিন্তু মার্চের শুরুতেই যেখানে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩০র ঘর সেখানে বসন্তের দোল যে কতটা উপভোগ্য তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে কিসের কারনে আবহাওয়ার এ তফাৎ? এ প্রশ্নটা সকলের কাছে তেমন গুরুত্ব না পেলেও কখনো ভেবে দেখছেন যদি একটা সুন্দর সকালের অপেক্ষায় আপনার চোখ খোলে একটা রুক্ষ পরিবেশে, জানলা খুলে আপনি অপেক্ষায় এক ঝলক মুক্ত বাতাসের অথচ কালো ধোঁয়ায় সেখানে আপনার নিঃস্বাস নেওয়াই দুস্কর অথবা যে পার্কে আপনি প্রত্যহ সকালে যান শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে সেখানে নেই কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, কেমন লাগবে ? এরকম কল্পনা করা এ মুহূর্তে আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও বর্তমানের বিশ্বায়নের যুগে খুব তাড়াতাড়িই এ কল্পনা রূপ নেবে বাস্তবের,বরং বলা ভালো, কল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই।

আধুনিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাছাড়া ব্যবহারে বাতাসে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান। পৃথিবীর বাইরে যে ওজোন গ্যাসের স্তর এতদিন আগলে রাখার চেষ্টা করেছে আমাদের সাধের পৃথিবীকে সেই ওজোন স্তর আমাদের কল্যানে আজ ক্ষতিগ্রস্ত ফলে উন্নয়নের পরিবর্তে হচ্ছে উষ্ণায়ন। পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে জলবায়ু, আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার আগেই ধেয়ে আসছে একের পর এক বিধ্বংসী ঝড়, জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলস্তর উপরে উঠে আসছে আশঙ্কাজনক হারে, বদলে যাচ্ছে বা বিলুপ্তির পথে বহু নদীপথ। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায় কখনো অতিবৃষ্টির কারনে হচ্ছে বন্যা কখনো বা অনাবৃষ্টির কারনে শুকিয়ে যাচ্ছে শস্যভুমি। কিন্তু তাতে মানুষের কি যায় আসে বরং নতুন উদ্যোগে বাড়ছে বন কেটে বসত গড়ার যজ্ঞ বা মনুষ্য সৃষ্ট দাবানলের মতো ঘটনা। ফলে, যে পরিবেশ কোনও বিশেষ উদ্ভিদের বেঁচে থাকার পক্ষে আদর্শ, তার অভাব অনুভূত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব অনুযায়ী পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলেই প্রাণী জগৎ থেকে বিদায় নিতে হবে সেই প্রজাতির প্রাণীকে। গবেষকদের পরীক্ষা সাপেক্ষ উদ্ভিদের এমনই ৮৬হাজার ভাসকুলার প্লান্ট (যে উদ্ভিদরা ভাসকুলার কলার মাধ্যমে জল, পুষ্টিকর খাবারদাবার ও অন্যান্য জৈব ও অজৈব পদার্থ নিজেদের দেহের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে) প্রজাতির গাছের মধ্যে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদের প্রজাতি হয় গবেষণা চলাকালীন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা খুব শীঘ্রই বিলুপ্তির পথে। ফলে, ডারউইনের ‘যোগ্যতমের জয়’ তত্ত্ব অনুযায়ী হারিয়ে যেতেই হবে এই সমস্ত উদ্ভিদের প্রজাতিদের। গবেষকদের হিসাবে অনুযায়ী, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে জিততে পারে সাকুল্যে ৬ হাজার ৯১৩টি প্রজাতির উদ্ভিদ। কিন্তু প্রশ্ন একটাই এ লড়াইয়ে টিকে থাকা কতদিন সম্ভব ?