ভোজনরসিক হিসেবে বাঙালির যেমন খ্যাতি জগৎ জুড়ে তেমন ভ্রমন পিপাসু হিসেবেও বাঙালির সুনাম কিছু কম না।সময়টা বসন্ত হলেও শীতের আমেজ বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। তাই মার্চের শুরুতেই যেখানে সূর্যের চোখ রাঙানিতে হাঁসফাঁস করছে মানুষের প্রাণ, সেখানে গ্রীষ্মের অবস্থা কল্পনা করেই বাঙালি নাজেহাল।কিন্তু যদি সাধ্যে কুলোয় তবে এই নাজেহাল অবস্থা থেকে মুক্তির একটা বিকল্প হতে পারে মধ্য ও পশ্চিম পাশ্চাত্যের শহর গুলো।কথায় ইউরোপ কে বলে সৌন্দর্য্যের রানী, এমন একটি রোম্যান্টিক মহাদেশ যেখানে মনোরম পরিবেশ মন মুগ্ধ হতে বাধ্য।

আর ইউরোপ নিয়ে যখন কথা হচ্ছে সেখানে লন্ডনের নাম আসবে না তা কখনো হয় ! এ শহরের একদিকে যেমন রয়েছে প্রাচীনত্ব তেমন রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্বও। সময় যেন প্রাচীন ভাস্কর্যের সাথে আধুনিকতার এক আশ্চর্য মেল্ বন্ধন ঘটিয়েছে লন্ডনের অলিতে গলিতে। তাই ঘুরে দেখতেই পারেন টাওয়ার অফ লন্ডন, ট্রাফালগার স্কোয়ার, টাওয়ার ব্রিজ’র মতো নানা দর্শনীয় স্থান, অথবা লন্ডনকে একটু অন্যভাবে উপভোগ করতে হলে লন্ডন আই’র ওপর থেকে লন্ডন শহরটিকে উপভোগ করতে পারেন একটু অন্যভাবে। ছাড়াও এখানে বিশ্বের প্রায় সবধরনের রেস্তরাঁ উপলব্ধ হওয়ায় বাঙালি হিসেবে খাওয়ার অসুবিধা হবেনা একেবারেই। বরং বলা চলেই গোটা দুনিয়াই আপনার কাছে ধরা দেবে লন্ডন রূপে।

যেখানে কথা হচ্ছে পাশ্চত্যের শহর নিয়ে সেখানে ‘সিটি অফ লাভ’ অর্থাৎ প্যারিসের উল্লেখ তো থাকবেই। ঠান্ডা মনোরম পরিবেশে আইফেল টাওয়ার কে সামনে রেখে, প্যারিসের রাস্তায় প্রিয় মানুষের হাত ধরে পথ চলার আনন্দ উপভোগ করতে কে না চায় ! তাহলে আরকি ভ্রমন পিপাসু হিসেবে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়তেই পারেন ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে। আর আপনি যদি আর্ট কালচারের ভক্ত হন তাহলে তো কথাই নেই, কারন এ ক্ষেত্রে ফ্রান্স আপনার কাছে আদর্শ। স্টেটলি মিউজিয়াম, লুভের মিউজিয়াম অথবা ঘুরে দেখতে পারেন প্রায় ৩৫০০০ আর্ট ফর্ম বিশিষ্ট মিউজিয়াম অফ প্যারিস। কি ভাবছেন আপনি আর্ট কালচারে মজলে সাথে সঙ্গীটির কি হবে ? তবে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন নেই, প্যারিস প্রেমের শহর হিসেবে যেমন খ্যাত তেমন খ্যাত ‘ফ্যাশন প্যারাডাইস’ হিসেবেও, তাই মিউজিয়াম গুলো ঘুরে দেখার সাথে নিজের প্রিয় মানুষটির জন্যে বেছে নিতে পারেন কিছু ফ্যাশনের কিছু এক্সক্লিউসিভ কালেকশন। তাছাড়া প্যারিস যাবেন আর আইফেল টাওয়ার উপভোগ করবেন না তা হয়, কারণ টাওয়ারের ওপর থেকে প্যারিস শহরের মনোরম দৃশ্য নিত্যদিনের ক্লান্তি মুছতে অব্যর্থ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই যখন এতদূর আসা, তখন পৃথিবীর বুকে স্বর্গ অনুভব করতে আপনাকে একবার হলেও আসতে হবে সুইজারল্যান্ডে।বর্তমানে বলিউডের সিনেমার হাত ধরে সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সম্পর্কে কম বেশি প্রায় সকলেই অবগত। কারন সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা বেশ দুস্কর। তবে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য’র কথা বলতে বসলে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, জেনেভা শহর গুলো সম্পর্কে যেন না বললেই নয়। মনে হবে যেন প্রকৃতি অতি যত্নে তুলির এক একটি ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছে তার অসামান্য সৃষ্টি। তবে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তেমন অন্যদিকে চেখে দেখতেই হবে সুইজারল্যান্ডের চকলেট ও পনির গলিয়ে বানানো ফনডু, সুইস চিজ, সুইস ওয়াইন এমনকি নিজের সংগ্রহেও রাখতে পারেন এমন অসাম্য স্বাদের ছোঁয়া বা বাড়ির সদস্যদের জন্য নিয়ে আসতেই পারেন বিভিন্ন স্বাদের সুইস চকলেট।
তবে বিদেশ ভ্রমনের কথা যখন হচ্ছে তখন পকেটের খেয়াল রাখার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে স্বাস্থ্যেরও। কারন ইউক্রেনে যুদ্ধের কারনে একদিকে যেমন বেড়েছে বিমান যাত্রার মাসুল অন্যদিকে ওমিক্রনের নতুন ভ্যারিয়েন্টও কিন্তু ভালোই প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে। তাই হ্যান্ডকিটে অবশ্যই রাখুন মাস্ক স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে প্যারাসিটামল থেকে শুরু করে এলার্জির মতো কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ। শীতের আমেজ পেতে সময়টা ইউরোপ ভ্রমনের জন্যে আদর্শ হলেও, সময়টা যেহেতু মার্চের শেষের দিক তাই পর্যাপ্ত গরম পোশাক নিতে ভুলবেন না যেন। তাই কিছুদিনের জন্য সকল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে জীবন সার্থক করতে ঘুরে আসতেই পারেন ইউরোপের এই শহর গুলো, যেখানে উপভোগ করা প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে বিদেশি খাবারের স্বাদ হয়ে থাকবে আপনার আজীবনের সম্বল।