আধুনিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাছাড়া ব্যবহারে বাতাসে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান। পৃথিবীর বাইরে যে ওজোন গ্যাসের স্তর এতদিন আগলে রাখার চেষ্টা করেছে আমাদের সাধের পৃথিবীকে সেই ওজোন স্তর আমাদের কল্যানে আজ ক্ষতিগ্রস্ত ফলে উন্নয়নের পরিবর্তে হচ্ছে উষ্ণায়ন। পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে জলবায়ু, আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার আগেই ধেয়ে আসছে একের পর এক বিধ্বংসী ঝড়, জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলস্তর উপরে উঠে আসছে আশঙ্কাজনক হারে, বদলে যাচ্ছে বা বিলুপ্তির পথে বহু নদীপথ। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায় কখনো অতিবৃষ্টির কারনে হচ্ছে বন্যা কখনো বা অনাবৃষ্টির কারনে শুকিয়ে যাচ্ছে শস্যভুমি। কিন্তু তাতে মানুষের কি যায় আসে বরং নতুন উদ্যোগে বাড়ছে বন কেটে বসত গড়ার যজ্ঞ বা মনুষ্য সৃষ্ট দাবানলের মতো ঘটনা। আর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব আবহাওয়ার ওপর বেশ জোরালো ভাবেই পড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদরা।

বৈশাখ মাস আসতে এখনো কিছুটা দেরি আছে,কিন্তু এখনই খটখটে শুকনো এবং গরম হাওয়ায় ফাটছে ঠোঁট, দিনের বেলায় বাইরে বেরোলে ত্বকে অনুভুত হচ্ছে জ্বালার অনুভূতি। মার্চে শুরুতেই যেখানে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৫র কোঠা, সেখানে গ্রীষ্মকালের বিষয়ে আগে থেকেই সাবধানবাণী শোনাচ্ছেন আবহবিদরা।প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী দ:বঙ্গের সবকটি জেলার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি পেরিয়ে গেছে, আসানসোল বাঁকুড়া অঞ্চলে তাপমাত্রা যেখানে ছুঁয়েছে ৩৯ র ঘর সেখানে ওড়িশার কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উল্লেখ্য, যে মাত্রা পর্যন্ত তাপমাত্রা মানবদেহে সহনীয়, সেই ‘ওয়েট বাল্ব’ মাত্রায় বর্তমানের ৩২ডিগ্রি তাপমাত্রাই বিপদজনক,সেখানে এই কদিনে রাজ্যের তাপমাত্রা ৩৫র ঘরে পৌঁছেছে।আবহাওয়াবিদদের মতে টানা ৬ঘন্টা এই তাপমাত্রায় থাকলে প্রাণহানি হওয়ার খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের আওতাধীন ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ( আইপিসিসি )পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনার ষষ্ঠতম রিপোর্টে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মৌসম ভবনের রিপোর্ট অনুযায়ী, দাক্ষিণাত্যের মালভুমি অঞ্চল থেকে গরম এবং শুকনো বাতাস উত্তর দিকে আসার ফলে উত্তর, মধ্য ও পূর্ব ভারতে তাপমাত্রার এমন পরিবর্তন।তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অশান্ত হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগরীয় আবহাওয়াও, ফলে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মরসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় আন্দামান সাগরে জন্ম নিয়ে রওনা দিয়েছে মায়ানমারের উদ্দেশ্যে।