ইউক্রেনে যুদ্ধ না লাগলে যেন জানাই যেত না যে হাজারে হাজরে পড়ুয়া ফি-বছর সেথায় পাড়ি জমায় কেবল ডাক্তারি পড়ার জন্যে। এখন পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী বাঙালি পড়ুয়ার সংখ্যাই সাড়ে তিনশোর আশপাশে। কিন্তু ডাক্তারি পড়ার সুযোগ এদেশে থাকলেও কিসের আকর্ষনে বিদেশে পাড়ি জমান ছাত্র-ছাত্রীরা ? সদ্য বিদেশ মন্ত্রকের নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী দেশে ফিরছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা, সামান্য হলেও স্বস্তিতে তাদের পরিবারের কাছ থেকে উঠে এল এ প্রশ্নের উত্তর। ডাক্তারি পরীক্ষায় শুধু পাশ করলেই মেলেনা এ দেশে ডাক্তারি করার সুযোগ, ভালো সরকারি কলেজে সুযোগের জন্যে পেতে হবে ভালো নম্বরও তবেই মিলবে এদেশে কম খরচে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ। আর যদি বেসরকারি কোথাও পড়তে হয় ডাক্তারি তাহলে সে খরচের বহর শুনেই পড়ার ইচ্ছে মাথায় ওঠে।ভারতে মোট মেডিক্যালের আসন সংখ্যা ৮৮,১২০টি, যার মধ্যে সরকারি ২৬৯টি , বাকি ২৬০টি বেসরকারি কিন্তু সেই তুলনায় দেশে ডাক্তারি পড়তে আগ্রহী পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ফি বছর দেশে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা এনইইটি পরীক্ষায় বসেন কিন্তু পাশ করেও নম্বর ভাল না থাকায় দেশে সুযোগ পান না অনেকে, অন্য দিকে, প্রবেশিকা ছাড়াই ভর্তি হওয়া যায় ইউক্রেনে।
তাই খরচকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে ডাক্তারির পড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে ফি-বছর লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া পাড়ি জমায় বিদেশে। আর ইউক্রেনে কম খরচের পাশাপাশি শিক্ষার মান এবং অন্যান্য পরিষেবাও যথেষ্ঠ উন্নত মানের। এমনকি ইউক্রেনের মেডিকেল কলেজ গুলো থেকে পাশ করে বেরোতে পারলে সুযোগ মেলে ইউরোপের অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষা থেকে চাকরি সবেরই সুযোগ বেশি।
তবে ইউক্রেনে পাশ করা ডাক্তারি ডিগ্রির গুরুত্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ গুলিতে থাকলেও ভারতে ওই ডিগ্রি নিয়ে ডাক্তারি করার অনুমতি পাওয়ার জন্য বসতে হয় ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের নেওয়া ‘ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট একজাম’এ। তবে ওই পরীক্ষায় পাশের হার খুবই কম হওয়ায় অনেক চিত্র ছাত্রী বিদেশ থেকে ডাক্তারি পরে দেশে ফিরলেও মেলে না ডাক্তারির সুযোগ।এখন ইউক্রেনের কথা বেশি করে জানা গেলেও তুলনায় অনেক বেশি পড়ুয়া ভারত থেকে চিন এবং ফিলিপিন্সে ডাক্তারি পড়তে যান। বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য পড়ুয়াদের শিক্ষাঋণ প্রদানকারী এক সর্বভারতীয় সংস্থা সূত্রে খবর ভারতের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পড়ার খরচ প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি সেখানে ইউক্রেন বা বিদেশের কলেজ গুলিতে ফি বাবদ বছরে খরচ মোটামুটি সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো। ফলে ছ’বছরের ফি বাবদ খরচ ২০ লাখ টাকার মতো।তাই ভারতীয় পড়ুয়াদের সাথে সাথে আরও অনেক দেশের পড়ুয়াদের কাছেও ইউক্রেন হয়ে উঠেছে ডাক্তারি পড়ার মহাতীর্থ।