ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমি দুনিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির জোগানে ধাক্কা লাগার আশংকায় বিশ্বের বাজারে তেলের দাম পৌঁছেছে প্রায় ১৩৯ ডলারের কাছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ১০৭ ডলার ছিলো ব্রেন্ট ক্রুডের দাম, আর এক ধরনের অশোধিত তেল আমেরিকার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম বেড়ে হয়েছে ব্যারেল প্রতি ১০৬ ডলার। এদিকে দেশে করোনা বিধি কিছুটা শিথিল হওয়ায় বাড়ছে তেলের চাহিদাও, ফলে ফেব্রুয়ারিতে আমদানিও ২০২০সালের ডিসেম্বরের পরে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে, যা দৈনিক ৪৮.৬ লক্ষ ব্যারেল। ফলে তেলের চাহিদা ও বিশ্ববাজারে তেলের দামের অনিশ্চয়তার জেরে দেশের তৈল সংশোধনাগার গুলি বেশি পরিমানে তেল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

এদিকে পূর্বে পারমানবিক চুক্তি লঙ্ঘনের কারনে ইরানের ওপর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা, ফলে ভারতে তেল রপ্তানিকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ইরানের থেকে তেল আমদানির পথ খোলা নেই ভারতের। তাই বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারনে বিকল্প সস্তার বাজার খুঁজতে আগে যেখানে রাশিয়ার থেকে প্রয়োজনের ১%তেল কিনত ভারত, সেখানে এখন তেলের বিকল্প যোগানকারী দেশ হিসেবে রাশিয়াকেই বাছতে হয়েছে ভারতকে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমি দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মস্কোও তেল সহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানীতে ছাড় দিচ্ছে ভারতকে, আর বর্তমানের চড়া দরের জামানায় যা কার্যত লুফে নিচ্ছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা গুলি।

তবে তেল আমদানির বিষয়ে ভারতের এই পদক্ষেপকে আমেরিকা, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আক্রমনকে ভারতের সমর্থন বলেই মনে করছে। কিন্তু তেল নিয়ে কোন রাজনীতি চায়না ভারত, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়ায় হয়েছে যে, ভারতের আইন সংগত ভাবে জ্বালানি কেনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়, কারন ভারতকে তার তেলের চাহিদা মেটাতে হয় আমদানি করেই, সেখানে সব বিকল্প ব্যবস্থাই খতিয়ে দেখতে হবে ভারতের । এমনকি যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ার থেকে ইউরোপের বহু দেশ তেল কিনেছে, তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখার সাথে সাথে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ভারতের কাছে যে কোনো রফতানিকারিই স্বাগত হওয়ায়, এই টানাপোড়েনের মধ্যে ভারতকে তেল রফতানির বার্তা দিয়েছে ইরান। এ দেশে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলী চেগেনি জানিয়েছেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে ইরানের, ফলে ভারতকে প্রয়োজনীয় তেল সরবরাহ করতে প্রস্তুত তেহরান।’