গত ১ জানুয়ারি কর্ণাটকের উদুপি জেলার কুন্ডাপুরে একদল হিজাব-পরা ছাত্রীর মুখের ওপর একটি কলেজের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর রাজ্যের কয়েকটি কলেজ হিজাব পরা তাদের ইউনিফর্ম নীতিবিরুদ্ধ বলে ক্লাসের ভেতর হিজাব পরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে বিতর্কের সূত্রপাত হয় রাজ্য জুড়ে। এমনকি মুসলিম ছাত্র ছাত্রীরা হিজাব কে মুসলিম বিধানের অংশ হিসাবে দেখলেও হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ অনেক জায়গাতেই সহিংস রূপ নেয়। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়ে পড়ে এবং পুলিশের সঙ্গেও ঘটে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা । কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করার সাথে সাথে সমস্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য।

গত ২৬শে জানুয়ারি কর্ণাটক সরকার একটি কমিটি গঠন করার মাধ্যমে ঘোষণা করে যে কমিটির নির্দিষ্ট সুপারিশ না করা পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবলমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে, তাই হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় কিছুই পড়ার অনুমতি নেই। কিন্তু সরকারের এ সিন্ধান্তের বিরোধিতা করে উদুপির কুয়েকজন ছাত্রী কর্নাটক হাই কোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন এবং হিজাব পড়াকে তাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করে তা যেন বাতিল না করা হয় সে আবেদনও জানান আদালতের কাছে। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি কর্নাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তি, বিচারপতি কৃষ্ণা দীক্ষিত এবং বিচারপতি জে এম খাজি অন্তর্বর্তী রায়ে বলেন, ‘‘যত দিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে, কর্নাটকে স্কুল, কলেজ খুলতে পারে কিন্তু কোনও পড়ুয়া ধর্মীয় প্রতীকমূলক কোনও পরিধান পরে আসতে পারবেন না।’’
এই বিতর্কের জেরে এর আগে এই মামলার ১১দফা শুনানি হয়ে যাওয়ার পর আজ সেই মামলার রায়দান। আর এই রায়দান প্রসঙ্গে জয়লাভ করল রাজ্য সরকার, খারিজ হয়ে গেল হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে হাই কোর্টে দায়ের হওয়া সমস্ত পিটিশন।এই মামলায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্নাটক সরকারের তরফে বলে আসা ‘হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয়’ অব্যাহত থাকল মঙ্গলবার হাই কোর্টের রায়েও। কিন্তু হিজাবের পক্ষে আন্দোলনরত পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তারা কর্ণাটক হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবেন।

তবে এদিন রায় দানের আগেই সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে এক নির্দেশিকায় জানানো হয় যে আগামী এক সপ্তাহের জন্য সমস্ত রকম জমায়েত এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বেঙ্গালুরু শহরে এবং ১৫ থেকে ১৯শে মার্চ পর্যন্ত ম্যাঙ্গালুরুতে সমস্ত বড়ো জমায়েত নিষিদ্ধ করার সাথে সাথে আন্দোলনের মূল কেন্দ্র উদুপিতে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে সমস্ত স্কুল কলেজ।